অষ্টম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি টিউটোরিয়াল -০১

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
সহকারী শিক্ষক, ভিক্টোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
প্রশ্ন : হাব, সুইচ ও রাউটারের বর্ণনা দাও।
উত্তর : হাব : দুই-এর অধিক কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হলে এমন একটি কেন্দ্রীয় ডিভাইসের দরকার হয়, যা প্রতিটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করতে পারে। এ ডিভাইসকে হাব বলে। হাবের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। নেটওয়ার্কে হাব ব্যবহার করলে তুলনামূলকভাবে খরচ কম পড়ে।
সুইচ : সুইচ হল বহু পোর্টবিশিষ্ট কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা তথ্য আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে সুইচ দেখতে হাবের মতো মনে হলেও এটি ভিন্ন পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কের ক্লায়েন্টের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করে।
রাউটার : রাউটার একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র, যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি, যা দুই বা অধিক একই প্রটোকলযুক্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করে। একটি নেটওয়ার্ক হাব ও সুইচের সমন্বয়ে তৈরি হয়। রাউটার দুটি ভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে অবস্থান করে। দুইয়ের বেশি ভিন্ন নেটওয়ার্কের মাঝেও অবস্থান করতে পারে।
প্রশ্ন : ল্যান কার্ড কী? বিভিন্ন ধরনের ল্যান কার্ড সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর : ল্যান কার্ড (LAN Card) হল Local Area Network Card। দুটি বা অধিক সংখ্যক কম্পিউটারকে একসঙ্গে যুক্ত করতে যে যন্ত্রটি অবশ্যই প্রয়োজন হয়, তা হল ল্যান কার্ড। অর্থাৎ আমরা যদি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই, তবে অবশ্যই ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হবে। নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত এক আইসিটি যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে কোনো ডেটা পাঠাতে বা গ্রহণ করতে ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে প্রায় সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাদারবোর্ডের সঙ্গেই ল্যান কার্ড সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। তারপরও কিছু আইসিটি যন্ত্রে আলাদা করে ল্যান কার্ড সংযুক্ত করতে হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন তারবিহীন ল্যান কার্ড খুবই সাধারণ। এর ফলে তারের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আধুনিক অফিসগুলোতে তারবিহীন ল্যান কার্ডই এখন সবার পছন্দ।
প্রশ্ন : স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার কী?
উত্তর : স্যাটেলাইট : মানবসৃষ্ট যেসব বস্তু নির্দিষ্ট কতকগুলো কাজের জন্য পৃথিবীর চারদিকে মহাশূন্যের নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে পারে, তাদের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। স্যাটেলাইটকে যদি ২৪ ঘণ্টায় একবার পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায়, তা হলে পৃথিবী থেকে মনে হয় সেটি যেন আকাশের কোনো এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বলে। আকাশে একবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বসানো হলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে সেখানে সিগন্যাল পাঠানো যায় এবং স্যাটেলাইট সেই সিগন্যালটিকে নতুন করে পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দিতে পারে। এ পদ্ধতিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রেডিও, টেলিফোন, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে সিগন্যাল পাঠানো যায়।
অপটিক্যাল ফাইবার : পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সিগন্যাল প্রেরণে স্যাটেলাইটের পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত সরু এক ধরনের কাচের তন্তু। শব্দ বা বিদ্যুৎশক্তিকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর করার পর তা অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অপটিক্যাল ফাইবারে যে আলোকে সিগন্যাল হিসেবে পাঠানো হয়, সেটি ইনফ্রারেড আলো এবং এ আলো আমাদের চোখে দৃশ্যমান নয়। প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যমে অ্যানালগ বা ডিজিটাল সংকেতকে প্রয়োজনীয় মডুলেশন করে আলোক সিগন্যাল হিসেবে রূপান্তর করা হয় এবং তা অপটিক্যাল ফাইবারে প্রেরণ করা হয়। অপটিক্যাল ফাইবারে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে তা গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছায়। ফলে গ্রাহক যন্ত্র কিছু প্রক্রিয়াকরণ শেষে তা ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে অনেক বেশি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব হয় এবং শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে যে একটি অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে একসঙ্গে কয়েক লাখ টেলিফোন কল পাঠানো সম্ভব। বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা যোগাযোগ এত উন্নত হয়েছে যে পৃথিবীর সব দেশই অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক দিয়ে একে-অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত। এখন সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন কেবল দিয়ে তথ্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.